আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী সহিংসতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল রোববার বিএনপির বিজয় মিছিল, নির্বাচনী প্রচারণায় এবং গাড়িবহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল প্রায় ২০টি এলাকায় সংঘর্ষ ও হামলা চালানো হয়েছে। এতে ২৫২ জন আহত হয়েছেন। ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী জোটের অর্ধশত গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ৩০টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় বিজয় দিবসের র্যা লি করার প্রাক্কালে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পাঁচ বিএনপি কর্মী আহত হলেও পুলিশ হামলাকারীদের আটক না করে উল্টো ৮ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে।
বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হামলার সময় দলীয় নেতাকর্মীদের বেষ্টনীর কারণে এবং পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে প্রণ বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
ঘটনার পরপরই আব্দুল্লাহ আল নোমান গতকাল সন্ধ্যায় তার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি হইনি। প্রায় সময় মিছিল মিটিংয়ে প্রতিপক্ষ হামলা করেছে, কিন্তু কখনো আমার ওপরে হামলার সাহস দেখায়নি। এবার তারা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে আমার ওপরে হামলার জন্য চেষ্টা চালায় এবং এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে সরিয়ে নেয়ার কারণে আমি প্রাণে বেঁচে যাই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা একরামুল করিম, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার সারোয়ার, কাজী বেলাল উদ্দিন, বিভাগীয় শ্রমিকদল নেতা এম নাজিম উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, আহমেদুল আলম রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, বাগেরহাট শহরের পিসি কলেজ এলাকায় বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনের বিএনপি প্রার্থী এম এ সালামের গাড়িবহরে হামলা করে ৯ জনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে খুলনা মহানগরীর কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি অফিসে খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল আহূত সংবাদ সম্মেলনে সালাম আহত কর্মীদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে হামলার বিবরণ দিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন জড়িত বলে জানান। রকিবুল ইসলাম বকুল তার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের লোকদের হামলায় কর্মীদের আহত হওয়া এবং পুলিশের নতুন করে মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করার তথ্য জানাতে গতকালের সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।
বাগেরহাটের এম এ সালাম সম্মেলনে বলেন, গতকাল সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাড়ে ১১টায় বিএনপি অফিস হয়ে কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করার উদ্দেশে যাত্রাপুর এলাকার দিকে রওনা হন। পিসি কলেজ এলাকায় পৌঁছলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসী তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তাদের বেপরোয়া মারধরে ৯ জন আহত হন। পুলিশের সাহায্য চাইলেও তারা কোনো সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ করেন। এরপর সেখান থেকে তারা চলে যেতে চাইলেও হামলাকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করে। তার বক্তব্যের মধ্যেই ফোনে খবর আসে, বাগেরহাট বিএনপি অফিস ভেঙেচুরে তছনছ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে প্রতিদিনই যেখানেই আমরা গণসংযোগে যাচ্ছি সেখানে বাধা দেয়া এবং প্রচারের মাইক ভাঙ্গা হচ্ছে।
খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল সম্মেলনে জানান, তার এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে যানবাহনে যথেচ্ছ স্টিকার লাগাচ্ছে এবং ফুলবাড়িগেট পুলিশ বক্সের ওপর দু’টি, মানিকতলা শ্রমিক লীগ অফিসে দু’টি ও ৫ ওয়ার্ডে পাঁচটি মাইকে প্রচার করছে। ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় দুই যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা আহত করে। পুলিশ তার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী শেখ সাদীসহ ১৪-১৫ নেতাকর্মীর নামে শনিবার রাতে ছিনতাইয়ের এক মিথ্যা মামলা করেছে। রোববার পুলিশ আরিফ, শেখ রিয়াজ সাহেদ ও জাহিদুল ইসলাম মল্লিককে আটক করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামীমুর রহমান শামীম, শেখ মোশাররফ হোসেন, স ম আবদুর রহমান, সিরাজুল হক নান্নু, শের আলম সান্টু, মোল্লা আবুল কাসেম ও আজিজুল হাসান দুলু।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ধানের শীষ প্রতীকের শোডাউনে এবং উঠান বৈঠকে হামলা করেছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। গতকাল পৃথকভাবে এমন ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং শহরের আলীরটেক এলাকায়। এতে উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ ধানের শীষ প্রার্থীর কয়েকটি গাড়ি, টেবিল চেয়ার ভাঙচুর করে। আহত হয় বিএনপির ১৫-২০ জন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অভিযোগ করেন প্রার্থীরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালায়। উপজেলার পাঁচরুখীসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল ৮টায় শোডাউনটি শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চলে। এ সময় তার গাড়িবহরে প্রায় তিন শতাধিক মোটরসাইকেল ও দুইশতাধিক প্রাইভেটকারে স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন বলে জানা গেছে। তারা স্থানীয় মোল্লারচর, গোপালদী, রামচন্দ্রী, মাহমুদপুর, উচিতপুরা, জাঙ্গালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রদক্ষিণ করেন।
থানা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহম্মেদ জানান, রাতে নেতাকর্মীরা বিশ্বনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর বাজারে প্রচারণা করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। সাথে থাকা পুলিশ সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েন। একই রাতে উপজেলার বান্টি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের চারটি গাড়িসহ মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় আজাদের বাবা মোস্তাফিজ মাস্টারসহ ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন। তবে অন্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এস এম আকরামের উঠান বৈঠক পণ্ড করে দিয়েছে লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক স্থানীয় চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও বাগি¦তণ্ডা হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে সভাস্থলের চেয়ারটেবিল। রোববার বিকেলে আলীরটেক পুরান বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও প্রতিকার চেয়ে লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। বেলা সোয়া ২টা থেকে তিনি এই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি আজ সকালে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নে আমার নির্বাচনী কাজে যাই। প্রথমত সরাতৈল এবং বল্লভবাড়ির মাঝামাঝি এলাকায় আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে আমরা নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বল্লভবাড়িতে মহির উদ্দিন তালুকদারের বাড়িতে যাই। সেখানে গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন তালুকদারের সাথে কথা বলার সময় আমাদের ওপর আবার হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অন্তত চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে আহত হন অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী। এই হামলায় নেতৃত্ব দেন গোহালিয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার।
লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, ‘হযরত আলী তালুকদার স্থানীয় এমপির (হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী) চেলা। গোহালিয়াবাড়িতে হযরত আলীর একটি বালুমহাল আছে। সে লুটপাট করে বালু তোলে। মানুষ সেটা পছন্দ করে না এবং বাধা দেয়। সরকারি কর্মকর্তারাও বাধা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় সে এটা করে যাচ্ছে। আমি বিজয়ী হলে ওইখানে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই সে তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেইসাথে জেলা রিটার্নিং অফিসার কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখানে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। আমি প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত এখানে থাকব। প্রয়োজনে মারা যাবো।’ একই সাথে তিনি কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিকেলে ৪টার পর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার শহীদুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় ধর্মঘটস্থলে যান। রিটার্নিং অফিসার এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে রিটার্নিং অফিসার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে বিএনপির বিজয় র্যা লি থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির ১৫ জনকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপি প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করেছেন।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, সকালে শহরের গোয়ালচামটে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ একটি র্যা লি ও সমাবেশ করেন। এরপর নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় শহরের আলিপুর কবিরবাগ স্কুলের সামনে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে এ হামলা করা হয়।
প্রথমে কানাইপুর ইউনিয়নগামী একটি টেম্পোর গতিরোধ করে টেম্পোর ১০ জনকে নামিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। আহতদের মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মোস্তফা (৩০), কাশেমাবাদ গ্রামের আনু মাতুব্বরের ছেলে উসমান মাতুব্বর (৩০), লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজেদ মাতুব্বরের ছেলে সাজেদ মাতুব্বর (৪০), রামখণ্ডের জাহাঙ্গীর মুন্সির ছেলে সোহেল মুন্সির (২৪) অবস্থা গুরুতর।
এরপর কৃষ্ণনগর ইউনিয়নগামী আরো মাহেন্দ্র গাড়ির গতিরোধ করে হামলা একইভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। এতে ইউসুফপুর গ্রামের কুদ্দুস মল্লিকের ছেলে শরিফুল (২৫), সাহেব আলীর ছেলে এখলাস (২৪), নুরুদ্দিন শেখের ছেলে সুমন (২৫), মোকসেদ আলীর ছেলে শামীম (২৪) ও সকেলউদ্দিনের ছেলে ইলিয়াস (২৫) গুরুতর জখম করা হয়। এ সময় তাদের নিকটে থাকা টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
আহতদের ফমেক হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা সবাই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধানের শীষের প্রচারণায় উপর্যুপরি বাধা, হামলা, মামলা, প্রচারণায় নিয়োজিত যানবাহন ও প্যান্ডেল ভাঙচুরের ঘটনায় নির্বাচনী মাঠে ক্রমেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এসব অনাকাক্সিত আক্রমণের জবাব না দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকরা আপাতত ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করলেও যেকোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘœ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এসব হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে বিএনপি নেতারা জানান। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল গতকাল সরাসরি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন বলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: জহিরুল হক খোকন নিশ্চিত করেছেন।
এ দিকে এ রিপোর্ট লিখার সময় রোববার সকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধে ফুল দিয়ে ফেরার পথে খোদ বিজয়নগর থানার সামনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে স্থানী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এতে জেলা ছাত্রদল নেতা আদিসহ বেশ কযেকজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে গত শনিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস কাবে জেলা বিএনপি আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে ধানের শীষের প্রচারণায় উপর্যুপরি বাধা, হামলা, মামলা, ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরা হয়।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরী) আসনের সিপিবি মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেত্রী কমরেড জলি তালুকদার নির্বাচনী প্রচারণাকালে সশস্ত্র হামলার শিকার রয়েছেন। গত শনিবার রাতে মোহনগঞ্জের মানসিরি পালপাড়া গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জলি তালুকদারসহ সাত নেতাকর্মী আহত হন।
গতকাল বেলা ২টায় নেত্রকোনা শহরের কালিবাড়ি রোডের বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জেলা শাখার কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নেত্রকোনা-৪ আসনে সিপিবি মনোনীত প্রার্থী কমরেড জলি তালুকদার লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তেব্যে বলা হয়, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় মানসিরি পালপাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণাকালে ২ নম্বর মানশ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহিমের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র দলীয় সন্ত্রাসী আকস্মিক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডমাইক নিয়ে যায়। এতে জলি তালুকদারসহ সাতজন আহত হন। তাদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থ প্রতিম, অনন্ত সরকার ও শাহীন আলম গুরুতর আহতাবস্থায় এখন নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকমীরা।
গতকাল রোববার সকালে পুরানবাজার রিফুজি কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে একটি দল গণসংযোগে এলে তাদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এই সূত্র ধরে দু’পক্ষ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ দু’পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বাসাবাড়িতে হামলা চালায়। এ দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীদের ইটের আঘাতে পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুর রশিদসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সেনবাগ সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর সেনবাগে বিএনপির বিজয় মিছিলের প্রস্তুতিকালে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগ। এ সময় অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরে ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারের ঘটে।
জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বিজয় দিবস উপলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে উপজেলা সদরে বিএনপি ফুল দিতে প্রস্তুতিকালে সেনবাগ দক্ষিণ বাজারের রাস্তার ওপর তাদের গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পৌর বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম লিটন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন রাসেল ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হোসেন স্বপনসহ ২০ জন আহত হন। এ সময় ফারুক রা পেলেও পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে অফিস থেকে চেয়ার টেবিল, ব্যানার, ফেস্টুন দলীয় কাগজপত্র বের করে শহরের প্রধান সড়কে ওপর অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়।
পলাশ (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, নির্বাচনী গণসংযোগের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খান ও তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মঈন খান, দলীয় কর্মী-সমর্থক ও পথচারীসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার করেছে বলে অভিযোগ করেন মঈন খান। আহতদের মধ্যে তিনজনকে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও অন্যদের ঢাকা এবং নরসিংদীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি। ড. মঈন খানের ব্যক্তিগত সহকারী বাহাউদ্দীন ভূঁইয়া মিল্টন জানান, মঈন খান ধানের শীষ প্রতীকের পে গণসংযোগ করতে গতকাল দুপুরে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকার পাঁচদোনা মোড়ে যান। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গণসংযোগ করে পাঁচদোনা বাজারে পৌঁছলে দু’দিক থেকে আগ্নেয়াস্ত্রধারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায। এ সময় পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে গুলি ছুড়তে থাকেন তারা। প্রাণ বাঁচাতে মঈন খানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বাজারের একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেও অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এলোপাতাড়ি হামলায় মঈন খানসহ ৫০ জন দলীয় কর্মী-সমর্থক ও পথচারী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অন্যদের নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ সনেট জানান, মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা আমির ও যুবলীগ নেতা কামাল মিয়ার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রলীগ নেতা আমির, মঈন খান স্যারকে আঘাত করতে গেলে আমি ও যুবদল নেতা আকরাম পাশে গিয়ে দাঁড়াই। এ সময় তারা আমাকে ও আকরামকে বেদম পিটাতে থাকে।
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জ-১ আসনে (ঘিওর, শিবালয় ও দৌলতপুর) বিএনপির প্রার্থী এস এ জিন্নাহ কবীরের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এতে তার বহরে থাকা চারটি প্রাইভেটকার ও দু’টি হায়েস গাড়ি ভাঙচুরসহ হামলায় তার পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় দৌলতপুর উপজেলা সদরে মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে প্রচারণায় যান বিএনপির প্রার্থী জিন্নাহ কবীর। এর পরপরই ওই স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের ১৫-২০ জন যুবক জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। একদল তাদের বহরে থাকা চারটি প্রাইভেটকার ও দু’টি হায়েস গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ছাড়া হামলায় তার পাঁচ কর্মী আহত হন।
গাংনী (মেহেরপুর) সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সহড়াতলা গ্রামে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।
তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফরমান আলী জানান, কয়েকদিন যাবৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পটি বন্ধ করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীদের চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। আমরা ক্যাম্পটি শনিবার রাত ১১টায় বন্ধ করে বাড়ি চলে আসি। সকালে গিয়ে দেখি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। অফিসে বেশ কিছু আসবাবপত্র ছিল। সেগুলোও ভাঙচুর করা হয়েছে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের কমপক্ষে ১৮টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ইউপি সদস্য তিনজন আহত হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাত থেকে রোববার ভোর এর মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত শুক্রবার ও শনিবার রাতে ৩০-৩৫ জন দুর্বৃত্ত চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা বাসস্ট্যান্ড, নতিপোতা মোড়, দলকা লক্ষ্মীপুর, কার্পাসডাঙ্গা বাজার, দেউলী, হাতিভাঙ্গা, নাপিতখালি, মোক্তারপুর, ঠাকুরপুর, সদাবরি, কুড়ালগাছি, বড় বলদিয়া, পারকৃষ্ণপুর ও জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এ সময় নির্বাচনী ক্যাম্পে অবস্থিত উথলী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দীনসহ তিনজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকী ফেরিঘাট এলাকায় নৌকা সমর্থকদের হামলায় জাতীয় পার্টির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতদের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে বাইনচটকী ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলোÑ হদয়, শুভ, লালচাঁদ, সবুজ রাসেল খান ও নাসরুল ইসলাম। আহত অপর পাঁচজনের নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরগুনা-২ (বেতাগী-পাথরঘাটা-বামনা) সংসদীয় আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মিজানুর রহমানের সমর্থনে নেতাকর্মীরা প্রচারণার জন্য পাথরঘাটার উদ্দেশে রওনা হন। বিকেলে বরইতলা থেকে ফেরিতে বাইনচটকী এলাকায় পৌঁছুলে নৌকার সমর্থিতরা অতর্কিতে তাদের গাড়িবহরে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ বাধা দিতে চেষ্টা করলেও পুলিশি বাধা উপক্ষো করে নৌকা সমর্থিতরা লাঠি নিয়ে জাতীয় পার্টির সমর্থকের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন এবং নৌকা সমর্থিতদের তোপের মুখে এক জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ফেরিযোগে দ্রুত নদীর পাড় হয়ে বরগুনার বরইতলা ফিরে আসেন।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তাজেম ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গত শনিবার সন্ধ্যায় ধানের শীষের নির্বাচনী গণসংযোগ চালানোর সময়ে ইউনিয়ন যুবলীগের হামলায় বিএনপির এক কর্মী মো: সুমন দেওয়ান আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় মজিদবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: মোজাম্মেল হক টুুকা মিয়া ওই দিন রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, গত শনিবার রাতে গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলা বাজারের আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপি অফিসও ভাঙচুর করা হয়। ডাকুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ গাজী জানান, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা সাজানো নাটক। তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে নিজেদের অফিসের কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে সাজিয়ে রেখেছে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখাতে।
আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় ডাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বাদল খান বাদি হয়ে গলাচিপা থানায় বিএনপির ৪৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৩৫ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের টবগী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোলা-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের এলাকায় আসাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে টবগী ইউনিয়নের উদয়পুর রাস্তার মাথায় এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপির সমর্থকরা আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর ও ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতরা ভোলা সদর ও বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে দুপুরে ভোলা-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজম মুকুল তার বোরহানউদ্দিনের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন বিএনপি প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম এলাকায় এসেই আবারো ২০০১ এর মতো সন্ত্রাসী তাণ্ডবলীলা শুরু করেছেন।
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে ইপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি বিএনপি।
সূত্র জনায়, গত শনিবার মরিচপুরান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক খন্দকার শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজনে ধানের শীষের পোস্টার ও ধানের শীষ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। গুজাকুড়া থেকে শুরু বাঁশকান্দা, ফকিরপাড়া বাজার হয়ে রাবারড্যাম বাজার পর্যন্ত সব এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
সাবেক মেয়র ও শহর বিএনপির আহবায়ক আনোয়ার হোসের জানান, ১৩ ডিসেম্বর নালিতাবাড়ী বিএনপির পক্ষ থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের কাছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ধানের শীষের পোস্টার লাগানো ও অফিস খোলতে বাধা প্রদান করার প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করা পরও আওয়ামী লীগ আমাদের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরীর ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিকার পায়নি।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত